![]() |
| D. P. - 470 |
আমাদের শরীরের হারের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি গুলি ফুলে ওঠা বা বিকল হয়ে যাওয়াকে আর্থারাইটিস বলে, চলতি ভাষায় ইহাকে গিট বাত বলা হয়ে থাকে। সাইনোভিয়াল মেমব্রেন এর সাইনোভাইটিস (ফুলে ওঠা) প্রদাহকে আর্থারাইটিস বলা হয়। যাহা খুব বেদনাদায়ক। গ্রিক শব্দ 'অথ'এর সঙ্গে 'ইটিস' যুক্ত হয়ে আর্থারাইটিস শব্দের উৎপত্তি। দুটি অস্থির সংযোগস্থলকে জয়েন্ট বলা হয়। লিগামেন্ট দুটি অস্থিকে সংযুক্ত করে থাকে। লিগামেন্ট গুলি রবারের ব্যান্ডের মতো হয়ে থাকে, যখন লিগামেন্ট অস্থি দুটিকে ধরে থাকে তখন মাংসপেশী আরাম বোধ করে এবং অস্থিগুলিকে খুব সহজেই সঞ্চালন করতে সাহায্য করে। কার্টিলেজ অস্থিগুলিকে খুব সহজেই সঞ্চালন করতে সাহায্য করে এবং অস্থিগুলিকে চারিদিক দিয়ে বেষ্টন করে থাকে এবং দুটি অস্থিকে ঘর্ষনের হাত থেকে রক্ষা করে। দুটি অস্থির মাঝখানে সাইনোভায়াল ফ্লুয়িড (রস) থাকে। এই সাইনোভায়াল ফ্লুয়িড দুটি অস্থি এবং কার্টিলেজকে রক্ষা করে। এই সাইনোভায়াল ফ্লুয়িড যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে আর্থারাইটিসের উৎপত্তি হয়।
প্রায় 100 রকমের বাতের রোগ দেখা যায়। তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলোঃ
(1) অষ্ট্রিও আর্থারাইটিস
ইহা একটি বহু প্রাচীন এবং একটি সাধারণ আর্থারাইটিস। সাধারণত সাইনোভায়াল ফ্লুয়িড ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে গেলে এই ধরণের রোগ দেখা দেয়। ইহার ফলে অস্থি ক্ষয় হতে শুরু করে এবং চলাফেরার সময় অস্থি সন্ধিদ্বয় একে অপরের সাথে ঘর্ষণ হতে থাকে সেই সময়ে অধিক পরিমাণে যন্ত্রণা অনুভব হয়। বিশ্ব ব্যাপী প্রায় 100 মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।
সাধারণ লক্ষণ
কখনো কখনো অস্থি সন্ধিতে ব্যাথা অনুভব হওয়া থেকে শুরু করে সময়ের সাথে এই ব্যাথা চরম আকার ধারণ করে থাকে। এর ফলে অস্থি সন্ধিতে চাপ প্রয়োগ করে অর্থাৎ কোন কাজ করতে গেলে সেটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর চিকিৎসা হল অস্থি সন্ধির পরিবর্তন অর্থাৎ জয়েন্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট।
সাধারণতঃ হাত, হাঁটু, মেরুদন্ড এই সব জায়গায় বেশী পরিমানে এই রোগ দেখা যায়।
(2) রিউময়েড আর্থারাইটিস
রিউময়েড আর্থারাইটিস হল আর্থারাইটিস বাত প্রবাহী অবস্থা। কার্টিলেজের মধ্যে যখন সাইনোভায়াল ফ্লুয়িড বিষাক্ত হয়ে ওঠে, তখন তাকে বলে রিউময়েড আর্থারাইটিস। মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রভাব অধিক দেখা যায়। কিন্তু আজকাল বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এই রোগের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
সাধারণ লক্ষণ
- সকালবেলায় হাঁটুর সন্ধিস্থান শক্ত হয়ে থাকে এবং প্রায় 30 মিনিট পর্যন্ত এরকম অবস্থায় থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতের বেলায় এই ধরনের সমস্যা বেশী হয়ে থাকে।
- বেশিক্ষণ বসে থাকার পর এই ধরনের সমস্যা দেখা যায় এবং পুনরায় চলাফেরা করতে সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।
- এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং ওজন হ্রাস পেতে শুরু করে।
- ক্রমাগত একের পর এক অস্থি সংযোগস্থান, হাত, হাতের আঙ্গুল, পায়ের পাতা, ঘাড়, কাঁধ আক্রান্ত হতে শুরু করে।
আর্থাইন হল বিশেষ ভাবে প্রস্তুত করা একটি আয়ুর্বেদিক ঔষধ। জয়েন্টের মধ্যেকার সাইনোভায়াল রস ক্ষয় হয়ে গেলে অথবা খারাপ হয়ে গেলে তার একমাত্র পুনরুদ্ধার করবার উপায় হল আর্থাইন। ইহার মধ্যে আছে অনন্ত মূল, রসনা, সজিনা, গুলঞ্চ এবং রক্ত পুননর্ভা ইত্যাদি উপাদানগুলির প্রত্যেকটি বহুগুন সম্পন্ন এই আর্থারাইটিসের প্রতিরোধক হিসাবে অত্যন্ত প্রয়োজন।
কার্যকারীতা
- আর্থাইন আপনার শরীরে সাইনোভায়াল রস উৎপাদন করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত সাইনোভায়াল রসকে পুনরুদ্ধার করে।
- অস্থির দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- অস্থির সংযোগস্থানে ব্যাথা উপশম করতে সাহায্য করে।
- মাংসপেশী সংকোচন এবং ব্যাথার উপশমে সহযোগীতা করে থাকে।
- অস্থিসন্ধিকে পুনরুদ্ধারের জন্য জীবন শক্তি প্রদান করে থাকে।
- অস্থিসন্ধিকে খুব সহজেই সঞ্চালিত করতে সাহায্য করে।
- অস্থির দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ব্যবহার বিধি
দিনে দুবার খাবার একঘন্টা আগে আর্থাইন খেতে হবে। ইহার সাথে উষ্ণ গরম জল এবং সাধারণ জল দিয়ে স্নান করতে হবে। ইহা অস্থির সংযোগস্থানে ব্যাথা উপশম করতে সাহায্য করে।

মন্তব্যসমূহ